মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

 

ফেনীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিস্তম্ভ

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সাথে তিন দিক থেকে ফেনীর রয়েছে সীমান্ত।

১মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার সাথে সাথে সারা দেশের মতো ফেনীও ফুঁসে ওঠে । বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চভাষণের পরপরই ফেনীতে শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের কাজ। জননেতা খাজা আহমদ ও জননেতা মালেক সাহেবের নেতৃত্বে গঠিত হয় ২টি সংগ্রাম কমিটি । একটি আওয়ামী লীগ সংগ্রাম কমিটি ও অপরটি যুব ও ছাত্র সংগ্রাম কমিটি । ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে একটি সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয় যা পরবর্তীতে সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির অন্তর্ভুক্ত হয়ে একত্রে কাজ করে । এরই ধারাবাহিকতায় জননেতা খাজা আহমদের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ সকাল থেকে ফেনীর পূর্বউকিল পাড়াসহ হাজী মনির উদ্দিন সওদাগর বাড়ির রফিকুল হকের বাসায় কর্মনির্ধারনী বৈঠকে ১১ জন সংগঠক পবিত্র কুরআন ছুঁয়ে স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজনে আত্মোৎসর্গের শপথ নেন । মূলত ঐদিন থেকেই শুরু হয় ফেনীর মুক্তযুদ্ধের পথচলা। যুব ও ছাত্র সংগ্রাম কমিটিতে ছিলেন জয়নাল হাজারী, জয়নালয় আবদীন(ভিপি জয়নাল), কমান্ডার মুর্তজা ভূঁইয়া, আব্দুল মোতালেব (কমান্ডার), জহির উদ্দিন বাবর, হাফেজ আহমদ, নূর মোহম্মদ হাজারী, জাফর উল­্যাহ খান, খোন্দকার মোজাম্মেল, মোহাম্মদ মুছা, কাজী নূরুন নবী সহ আরো কয়েক জন।

২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীঘুমন্ত বাংগালীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লে ২৬ মার্চ বিকেলে জননেতা খাজা আহমদ ও জননেতা মালেক সাহেবের নেতৃতেব বৈঠকে বসেন সংগঠকবৃন্দসহ অপরাপর নেতৃবৃন্দ। বৈঠকের সিদ্ধান্তানুযায়ী ফেনী পিটিআই'র মাঠে শুরু হয় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। ৩০ মার্চ সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ, সামরিক, আধা-সামরিকবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সৈনিক এবং যুব ও ছাত্রদের নিয়ে মিশ্রবাহিনী । তৎপূর্ব হতেই ৩০০ জনের একটি বাহিনী নিয়ে পিটিআই মাঠে শুরুহয় সামরিক প্রশিক্ষণ । প্রথম থেকে প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন সুবেদার মেজর(অবঃ) আবু আহম্মদ (খাজুরিয়া ইব্রাহিম মৌলবী বাড়ি), ফ্লাইট সার্জেণ্ট (অবঃ) নূরুল ইসলাম(কালিদহ), সার্জেণ্ট সামছুল হক(ফরহাদ নগর), সুবেদার সিদ্দিকুর রহমান, ব্যাটেলিয়ান সামছু(উকিল পাড়া), ক্যাপ্টেন আবদুররৌফ(সোনাপুর) সহ আরো কয়েকজন ।

২৩ এপ্রিল সংগঠকগনসহ হাজার হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন জনতাসীমানা অতিক্রম করে বিলোনিয়া সহ ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং ফেনীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। এইসময় বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স - বি এল এফ (বিলোনিয়া ) প্রধান হিসাবে দায়িত্ব নেন জননেতা আব্দুল মালেক ।

ফেনী সীমান্তে মুক্তিযুদ্ধের বেশ কয়েকটি যুদ্ধ হয়। এর মধ্যে শুভপুর ও বিলোনিয়া যুদ্ধ অন্যতম। তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতা ফেনী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আব্দুল মালেক (যুদ্ধকালীন সময়ে বি এল এফ এর প্রেসিডেন্ট) ও খাজা আহমদের নেতৃত্বে ফেনীর মুক্তিযোদ্ধারা দেরাদুন ও চোত্তাখোলায় প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন সাব-সেক্টর কমান্ডার জাফর ইমামের নেতৃত্বে বিলোনিয়া যুদ্ধ একটি অনন্য রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে।

৬ ডিসেম্বর ফেনী জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ফেনীকে মুক্ত করেন। প্রতি বছর ৬ ডিসেম্বর দিনটিকে ফেনী জেলাবাসী ফেনী মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করে।মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য ফেনীর ৩১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় খেতাব দেওয়া হয়। খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ৪ জন বীর উত্তম, ৭ জন বীর বিক্রম এবং ২০ জন বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন।

No comments:

Post a Comment

কিভাবে কাতারের এল পাকিং টেস্ট পাস করবেন

  আসসালামুয়ালাইকুম আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমার ইউটিউব চ্যানেল ফেনীর আড্ডা  যারা আমার ইউটিউব চ্যানেলের নতুন তারা দয়া করে আমার চ্যানেলটি স...